পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ লাভের একদিন পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২৭টি পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ লাভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে।
নোবেল পুরস্কার যে ছয়টি বিষয়ে দেয়া হয়, সেখানে পরিবেশ নেই। তবে জাতিসংঘের পরিবেশ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ আখ্যা পেয়ে থাকে পরিবেশের নোবেল হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ সেই পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত যতগুলো পুরস্কার পেয়েছেন তার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।
এর আগে এই বছর শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নারী পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের জন্য ডব্লিউআইপি (ওম্যান ইন পার্লামেন্ট) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২৫ মার্চ ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় তাঁকে এই পুরস্কার দেয়া হয় ।
২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’ পুরস্কারে ভূষিত করে। খাদ্য উত্পাদন ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করে।
২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন, ‘একটি বাড়ি ও একটি খামার প্রকল্প’ ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক ‘মান্থন এওয়ার্ড’ এবং জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দারিদ্র্যতা, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় ‘ডিপ্লোমা এওয়ার্ড’ পদকে ভূষিত করে শেখ হাসিনাকে।
এর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য আইএনইএসসিও ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীকে কালচারাল ডাইভারসিটি পদকে ভূষিত করে।
২০১১সালের ২৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন ব্রেক্রো এমপি প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনবদ্য অবদানের জন্য গ্লোবাল ডাইভারসিটি এ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।
এ ছাড়াও একই বছর সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড, স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) সাউথ সাউথ নিউজ এবং জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড-২০১১: ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট হেলথ এই পুরস্কারে ভূষিত করে ।
শিশুমৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
একই বছরের ২৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য এসটি. পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। ১২ জানুয়ারি বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক-২০০৯’-এ ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী।
২০০৫ সালের জুন মাসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া।
২০০০ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকন ওমেনস কলেজ ‘পার্ল এস বাক পদক’ প্রদান করে। একই বছর ৪ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর অনারিয়াস কসা এবং ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ‘ইউনিভার্সিটি অব বার্ডিগ্রেপোট’ বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টরর্স অব হিউম্যান লেটার্স’ প্রদান করে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১৯৯৯ সালের ২০ অক্টোবর ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ এফএও কর্তৃক ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৮ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী ’ পুরস্কারে ভূষিত করে। একই বছরের এপ্রিলে নিখিল ভারত শান্তি পরিষদ শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘মাদার তেরেসা পদক’ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখার জন্য ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিঙ্ হুফে বইনি’’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।
একই বছর ২৮ জানুয়ারী শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানমূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৯৭ সালে লায়ন্স ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক এ্যাসোসিয়েশন কতৃক ‘রাষ্ট্রপ্রধান পদক’ প্রদান এবং রোটারী ইন্টারন্যাশনালের রোটারী ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে ‘পল হ্যারিস ফেলো’ নির্বাচন এবং ১৯৯৬-১৯৯৭ সালের সম্মাননা মেডেল প্রদান করে।
এ ছাড়াও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি শান্তি, গণতন্ত্র ও উপমাহদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রদান করে। ২৫ অক্টোবর গ্রেট বৃটেনের ডান্ডি অ্যাবার্তে বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘ডক্টর অব লিবারেল আর্টস’ ডিগ্রি, ১৫ জুলাই জাপানের বিখ্যাত ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মাণসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি এবং ৬ ফেব্রুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ উপাধি প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও পদক লাভকে জাতির জন্য গর্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া এ ধরনের পুরস্কার গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআআইএসএস)-এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, এই পুরস্কার ও স্বীকৃতি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।